IQNA

গাম্বিয়ান টেক্সিচালকের প্রেমের টানে ৯ সন্তানের ব্রিটিশ জননী হেইডির ইসলাম গ্রহণ

23:38 - November 28, 2018
সংবাদ: 2607374
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুক্তরাজ্যের বাসিন্দা এবং নয় সন্তানের জননী হেইডি হেপওর্থ (৪৫) ইন্টারনেটে পরিচয়ের সুবাদে গাম্বিয়ার এক নাগরিকের প্রেমে পড়েন এবং ইসলাম ধর্ম গ্রহণের মাধ্যমে তিনি তাকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এরই মধ্যে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছেন। তিনি হিজাব পরিধান করে নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে আল্লাহ কাছে দোয়া করছেন তার জীবনের সেই প্রতিক্ষিত বড় দিনটির জন্য।

বার্তা সংস্থা ইকনা'র রিপোর্ট: তিনি গাম্বিয়ার একটি মসজিদে তাদের বিয়ের অনুষ্ঠান করার পরিকল্পনা করেছেন। গাম্বিয়ার জনসংখ্যার বেশির ভাগই মুসলিম এবং হেইডির ভাষায়- ‘এই দেশটি যুক্তরাজ্যের চাইতেও বেশি সুখী এবং যত্নশীল একটি দেশ।’

৩১ বছর বয়সী গাম্বিয়ার নাগরিক মামাদু সালিউ’র সাথে তার সম্পর্কের বিষয়ে বলতে গিয়ে হেইডি বলেন, ‘কেউই বলতে পারবে না এটি টিকবে কিনা কিন্তু আমরা একে অন্যকে ভালবাসি এবং আমরা বিয়ে করার পরিকল্পনা করেছি।’

মামাদু সালিউ’র সাথে ফেইসবুকে পরিচয়ের পর গত বছর হেইডি তার স্বামীর সাথে ২৩ বছরের বিবাহিত জীবনের ইতি টানেন।

তার স্বামী ৪৫ বছর বয়সী এন্ডি বলেন, ‘একটি জীবনের মধ্যবর্তী সময়ের একটি সঙ্কট। সে মগজ ধোলাইয়ের শিকার হয়েছে।’

কিন্তু হেইডির মত একজন যিনি জীবনে কখনো বিমানে চড়েননি তিনি এখন পশ্চিম আফ্রিকায় অবস্থান করছেন এবং এর পূর্বে তিনি গাম্বিয়ায় তার ট্যাক্সি চালক প্রেমিককে দেখতে অন্তত চারবার ভ্রমণ করেছিলেন।

তার স্বামীর সাথে চূড়ান্ত ছাড়াছাড়ি হয়ে গেলে তিনি আসছে বছরে পুরোপুরিভাবে গাম্বিয়াতে বসবাস করতে চলে আসবেন। তার স্বামী এন্ডির সাথে তার ছয়জন সন্তান রয়েছে এবং এন্ডির পূর্বে তার প্রাক্তন স্বামীর ঔরসে তার আরো তিনজন সন্তান রয়েছে।

হেইডি হেপওর্থ বলেন, ‘আমি মনে করি এটি একটি ভালো উদ্যোগ।’

‘একটি অসুখী বিবাহের মাধ্যমে আমি ইতোমধ্যেই আমার জীবনের অনেকটা সময় নষ্ট করেছি।’

তার স্বামী এন্ডি তাদের সন্তানদের এভাবে ছেড়ে যাওয়াতে হেইডি হেপওর্থের সমালোচনা করে বলেন, ‘একজন যত্নশীল মা কখনো তার সন্তানদের রেখে তার ছেলে বন্ধুর সাথে আফ্রিকায় পালিয়ে যেতে পারে না।’

কিন্তু গত বছর বার্তা সংস্থা দ্যা সানের সাথে এক আলাপকালে হেইডি হেপওর্থ তার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে বলতে গিয়ে বলেন, ‘আমার বিন্দুমাত্র দুঃখবোধ নেই। আমি আতঙ্কিত বাচ্চাদের মা নই।’

‘আমার সন্তানদের ছেড়ে যেতে আমার খুবই কষ্ট হবে কিন্তু তারা আমার সাথে এখানে আসবে না। সুতরাং আমার কাছে এছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই।’

আফ্রিকার যুবকের সাথে হেইডি হেপওর্থের প্রেমের কাহিনী তার যুক্তরাজ্যের সান্ডারল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের হেট্টন-লি-হোলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

হেইডি হেপওর্থ বলেন, ‘আমাদের বৈবাহিক জীবনের শেষ দুবছরে এন্ডি এবং আমি একটি বাথরুম ব্যবহার করতাম না, এমনকি আমরা একই বিছানায় শোয়া বন্ধ করে দিয়েছিলাম।’

‘গত বছরের শেষের দিকে আমি আমার একজন মেয়ের ফোন নম্বর জানার জন্য এন্ডির ফোনটি হাতে নিই এবং সেখানে অচেনা দুজন নারীর বার্তা দেখে আমি অবাক হয়ে যাই।’

‘আমরা এর পর থেকে আরো দূরত্ব বজায় রেখে চলতে শুরু করি এবং আমি সত্যিই খুব অখুশি ছিলাম। আমি এর পরে বাচ্চাদের বিদ্যালয়গুলোতে কাজ করা শুরু করে দিই, যাতে করে আমি এসব দুঃখ ভুলে থাকতে পারি এবং একটু ভালো জীবন যাপন করতে পারি।’

হেইডি হেপওর্থের আফ্রিকান প্রেম কাহিনী ছড়িয়ে পড়লে টুইটারে অনেকেই তাকে একজন ‘প্রতারক’ বলে গালি দিয়েছেন।

এদের একজন বলেন, ‘আমরা কি আর কয়েক মাস পরে এই মহিলার বিষয়ে কোনো আপডেট খবর পাবো যখন ইনি তার সম্পূর্ণ অর্থ হারিয়ে ফেলবেন। তাকে একজন ঠগ বলতে হচ্ছে এ জন্য আমি দুঃখিত।’

হেইডি হেপওর্থ যদিও বলেছেন যে, মামাদু সালিউ আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য তার সাথে ফেইসবুকে যোগাযোগ করেন নি। তার ভাষায়- ‘সে আমার নিকট থেক কোনো কিছুই আশা করে না। তার তিনটি ব্যবসা রয়েছে। তার নিজের পাসপোর্ট রয়েছে এবং তার নিজেরই ভিসা রয়েছে, সুতরাং তার নিজের ভিসা থাকা সত্ত্বেও কেন সে আমাকে আরেকটি ভিসার জন্য বিয়ে করবে?’

‘তার ভাইয়ের ছেলেকে দেখতে সে প্রায়শই যুক্তরাজ্য আসে। তার ভাইয়ের একজন স্ত্রী ছিল যিনি একটি বিয়োগান্তক ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেছেন। আর তারা প্রায়ই একসাথে যুক্তরাজ্যে আসেন।’ দ্যা সান ডট কম।

captcha