IQNA

তাতার মুসলমানদের ঘরে ফেরার স্বপ্ন ও সংগ্রাম

8:15 - June 28, 2022
সংবাদ: 3472054
তেহরান (ইকনা): কিয়েভের একটি প্রধান সড়কের পাশে হোটেলের পোড়া ভবনের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছেন ৫৭ বছর বয়সী ঈসা আকায়েভ। তিনি ব্যাখ্যা করছেন কোন বিষয়টি তাঁকে মুসলিম স্বেচ্ছাসেবী দল গঠন এবং ইউক্রেনের পক্ষে যুদ্ধ করতে উদ্বুদ্ধ করেছে।
তিনি বলেন, ‘আমি শুধু ক্রিমিয়ার বাড়িতে ফিরতে চাই। ’ ২০১৪ সালে রাশিয়া ক্রিমিয়াকে একীভূত করার পর আকায়েভ কিয়েভে চলে আসেন এবং ক্রিমিয়ান তাতারদের নিয়ে ‘ক্রিমিয়া ব্যাটালিয়ন’ গঠন করেন।
 
এরা মূলত কৃষ্ণ সাগরের তীরবর্তী এই উপদ্বীপের আদিবাসী তুর্কি মুসলিম।
২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ করার পর তাঁর ইউনিটের ৫০ জন যোদ্ধা কিয়েভ অঞ্চলে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এখন তাঁদের দক্ষিণ ফ্রন্টের খেরসনে নিযুক্ত করতে চাচ্ছেন, যা ক্রিমিয়ার সীমান্তবর্তী। তাঁদের চূড়ান্ত লক্ষ্য ক্রিমিয়া পুনরুদ্ধার করা। যদিও যুদ্ধের শুরুতেই রাশিয়া খেরসন অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করায় তা আরো দুঃসাধ্য মনে হচ্ছে। ইউক্রেনীয় সেনারা বর্তমানে ক্রিমিয়া উপদ্বীপ থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। অন্যদিকে ধীরগতিতে হলেও রুশ সেনারা যুদ্ধক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে।
 
মস্কোর প্রতি তাদের এই সন্দেহের শিকড় অনেক গভীরে প্রোথিত। সোভিয়েত রাশিয়ার স্বৈরশাসক জোসেফ স্ট্যালিন ক্রিমিয়ার মুসলিম তাতারদের গণনির্বাসনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। যাদের মধ্যে আকায়েভের দাদা-দাদিও ছিলেন। ১৯৪৪ সালে তাদের বিরুদ্ধে নির্বাসনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল নাৎসি জার্মানিকে সহযোগিতা করার অভিযোগে। ১৯৮০ সালে শুধু তাদের উত্তরাধিকারীদের ফিরে আসার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। আকায়েভ ১৯৮৯ সালে উজবেকিস্তান থেকে ফিরে এসেছিলেন। নির্বাসিত মানুষরা ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন মুক্তি হিসেবেই দেখেছিল।
 
২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখলের পর নতুন নিপীড়নের ভয়ে আকায়েভ কিয়েভ চলে আসেন এবং প্রথমে ইউক্রেনের নিরাপত্তা বাহিনী তাঁকে প্রত্যাখ্যান করে। তিনি বলেন, ‘এটা খুব কঠিন ছিল। বহু মানুষ মুসলিমদের বিশ্বাস করে না, বিশেষত ক্রিমিয়ান তাতারদের। সবাই ভাবত আমরা বিচ্ছিন্নতাবাদী হব, আর কিছু নয়। ’ কিন্তু ২০১৪ সালে যখন ইউক্রেনের পূর্ব দনবাসের রুশপন্থীরা অস্ত্র হাতে তুলে নিল, তখন পরিস্থিতি পাল্টে গেল। তারা স্বেচ্ছাসেবী দল হিসেবে ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধন লাভ করে এবং যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। এতে তাদের তিনজন আহত হয়। গত মাসে ইউক্রেন সেনাবাহিনীর একটি পূর্ণাঙ্গ ইউনিট হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হতে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
 
আকায়েভের ব্যাটালিয়নের অর্ধেকের বেশি সদস্য ক্রিমিয়ান তাতার। ক্রিমিয়ার ১৫ শতাংশ মানুষ তাতার মুসলিম। এ বিষয়ে ইউনিটের ইমাম সেরহি, যিনি ২০০৪ সালে ইসলাম গ্রহণ করেন তিনি বলেন, ‘ইউনিটের বেশির ভাগ ক্রিমিয়ান। কেননা তারা তাদের উপদ্বীপ স্বাধীন করতে চায়। কিন্তু ইউনিটের সদস্য হতে হলে ক্রিমিয়ান হতে হবে, এমন কোনো নিয়ম নেই। ’
 
২০১৭ সালে প্রকাশিত জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ক্রিমিয়ায় গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ করা হয়েছে। তার মধ্যে আছে তাতারদের ভয় দেখানো, ঘর তল্লাশি করা এবং আটক করা। ২০১৬ সালে মস্কো ক্রিমিয়ান তাতারদের প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠান ‘মেজলিস’কে নিষিদ্ধ করে। কেননা প্রতিষ্ঠানটি রাশিয়ার একটি তদন্ত প্রতিবেদন অস্বীকার করেছিল। যে প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ২০১৪ সালের গণভোট ক্রিমিয়ার অন্তর্ভুক্তিকে বৈধতা দিয়েছে।
 
আকায়েভ বলেন, কিয়েভ থেকে ২৫ কিলোমিটার পশ্চিমের গ্রাম ইয়াসনোরোদকাতে এবং পরবর্তী সময়ে মতিঝিনে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছে।
 
পুড়ে যাওয়া হোটেলটি আকায়েভের কাছে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। কারণ ‘আমরা এই জায়গাটি কিনতে চেয়েছিলাম। আমরা চেয়েছিলাম এখানে একটি তাতার স্কুল ও মসজিদ নির্মাণ করতে। এর কিছুই হয়নি। এরপর তো যুদ্ধই শুরু হলো। আমি এখনো এই প্রকল্পের স্বপ্ন দেখি। তবে সত্যিকার অর্থে আমি শুধু ক্রিমিয়ায় ফিরে যেতে চাই। ’
 
রয়টার্স অবলম্বনে
 
 
captcha