IQNA

সৌদি আরবে মানবাধিকার লঙ্ঘন অব্যাহত: কোনো অভিযোগকে আমলে নিচ্ছে না সরকার

0:01 - December 18, 2020
সংবাদ: 2611975
তেহরান (ইনকা): সৌদি আরবের নিরাপত্তা বাহিনী সেদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন অব্যাহত রেখেছে। সৌদি শাসকবর্গের কাছে মানবাধিকারের কোনো গুরুত্ব নেই। ওই দেশটিতে রাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা বজায় রয়েছে এবং ধর্মের নামে বিকৃত ও উগ্র ওয়াহাবি মতবাদ তারাই সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিচ্ছে।

সৌদি আরবের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার সাথে সেদেশের শাসকগোষ্ঠীর চিন্তাভাবনা ও রাষ্ট্র পরিচালনার নীতির কোনো সঙ্গতি নেই। সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় জনগণের অংশগ্রহণেরও কোনো সুযোগ নেই। যেহেতু সেখানে গণতন্ত্র নেই তাই শাসক বা সরকার নির্বাচনের অধিকারও জনগণের নেই। সম্পদে প্রাচুর্য সৌদি রাজ পরিবারের সদস্যরা অত্যন্ত আরাম-আয়েশি জীবন যাপন করলেও সেদেশটির জনগণের একটা বিরাট অংশ দরিদ্র, বেকার এবং বৈষম্যের শিকার। সামাজিক ব্যবধান বাড়তে থাকায় জনমনে সরকার বিরোধী প্রতিবাদ, ক্ষোভ ও সমালোচনা বাড়ছে।

কিন্তু সরকার কোনো ধরনের সমালোচনা শুনতে রাজি নয় এমনকি নাগরিক অধিকার আন্দোলনকারীদের তৎপরতা চালানোরও কোনো সুযোগ নেই। যে কোনো প্রতিবাদকারীকে সরকার কঠোর হাতে দমন করে। অনেক আগে থেকেই বিশেষ করে ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ক্ষমতাধর হওয়ার পর এ পরিস্থিতি আরো ভয়ানক রূপ নিয়েছে। তিনি এ পর্যন্ত বহু আলেম, চিন্তাবিদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক, মানবাধিকার কর্মী, ব্যবসায়ী এমনকি রাজ পরিবারের বহু সদস্যের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছেন। শুধু সরকারের নীতির বিরোধী হওয়ার কারণে দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে তাদেরকে গ্রেফতার অথবা হত্যা করা হয়েছে। সরকারের এ আচরণের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভও হয়েছে।

সৌদি সরকার সবচেয়ে বেশি নিপীড়ন চালাচ্ছে পূর্বাঞ্চলীয় এলাকার অধিবাসীদের ওপর। ওই এলাকার জনগোষ্ঠীর মাত্র ১৫ থেকে ১০ শতাংশ হচ্ছে শিয়া মুসলিম জনগোষ্ঠী। এরাই সরকারের সবচেয়ে বড় টার্গেট এবং দীর্ঘদিন ধরে তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী সৌদি নিরাপত্তা বাহিনী সম্প্রতি শিয়া মুসলিম অধ্যুষিত এলাকার বহু ঘরবাড়ি ধ্বংস করেছে এবং অন্তত ৩৪জন তরুণ ও ধর্মীয় নেতাকে ধরে নিয়ে গেছে। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতেও নিরাপত্তা বাহিনী ওই এলাকার জনগণের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও দমনপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সৌদি নাগরিকদের বিরুদ্ধে শাসকবর্গের জুলুম নির্যাতনের ব্যাপারে একদিকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ নীরব রয়েছে অন্যদিকে বাকস্বাধীনতা ও মানবাধিকারের দাবিদার বৃহৎ শক্তিগুলোও টু শব্দটিও করছে না। শুধুমাত্র হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা সৌদি সরকারের দমনপীড়নের বিরুদ্ধে কথা বলছে ও সমালোচনা করছে। বেসরকারি এসব সংস্থার রিপোর্ট কিংবা তাদের সমালোচনার খুব একটা মূল্য না থাকায় এবং কোনো বিষয়ে তাদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ক্ষমতা না থাকায় সৌদি সরকার তাদের সমালোচনায় কর্ণপাত করছে না। এ প্রসঙ্গে সৌদি নারী লাজিন হোজলুলের ঘটনার কথা উল্লেখ করা যায়। নারীদের জন্য ড্রাইভিংএর অনুমতি দেয়ার আহ্বান জানানোয় সৌদি ওই নারীকে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। গ্রেফতার করে তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। এমনকি বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থাগুলো প্রতিবাদ জানালেও তাতে সৌদি সরকার কর্ণপাত করেনি এবং নারীদের ব্যাপারে নিজেদের বিদ্বেষী নীতিতে অটল রয়েছে।
সূত্র: পার্সটুডে

captcha