IQNA

স্কুলের খরচ জোগাতে নিজের চুল বিক্রি সেলুনে চুল কাটা, অতঃপর হালিমার বিশ্বজয়

23:59 - September 24, 2018
সংবাদ: 2606800
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: কেন্ডাল জেনার এবং গিগি হাদিদ এমন একটি যুগে জন্ম নিয়েছেন যখন ফ্যাশন শিল্পে কাজ করার জন্য সম্পদশালী হওয়াকে একটি পূর্ব শর্ত হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু বিশ্বের প্রথম হিজাব পরিহিত আন্তর্জাতিক রানওয়ে মডেল ২০ বছর বয়সী হালিমা এডেনের জন্য এটি সত্য নয়। হালিমা এডেন বেড়ে উঠেছিলেন কেনিয়ার একটি শরণার্থী শিবিরে। তিনি তার পরিবারের সাথে হাতে কোনো টাকা পয়সা ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান।

 ইমাম মাহদীর প্রতি শিশুদের চিঠি
বার্তা সংস্থা ইকনা: এই সোমালিয়ান মডেলকে তার বর্তমান অবস্থানে আসার জন্য সারা জীবন সংগ্রাম করতে হয়েছে। ১০ বছর বয়সের সময় তিনি স্কুল থেকে ভ্রমণে যাওয়ার টাকা যোগার করার জন্য নিজের চুল বিক্রি করেছিলেন। ১৬ বছর বয়সের সময় তাকে বিদ্যালয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দুটি কাজে যোগদান করতে হয়েছিল।

আর মাত্র ১৯ বছর বয়সেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মিনিসোটা রাজ্যে হিজাব ও বোরকা পরিধান করে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে ‘মিস মিনিসোটা’ হন এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর প্রধান শিরোনামে আসেন।

সোমালিয়ার গৃহযুদ্ধ থেকে পালিয়ে গিয়ে এডেনের পরিবার কেনিয়ার একটি শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়। তিনি শরণার্থী কেন্দ্রে থাকার সময় আশ্রয় নেয়া বিভিন্ন নারীদের কাছ থেকে সুন্দর করে চুল কাটা শেখেন।

যখন তিনি এবং তার পরিবার যুক্তরাষ্ট্রের মিনিসোটা রাজ্যে আসেন তখন সেখানে শরণার্থী কেন্দ্রে শেখা দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে তার নিজের ব্যবসা শুরু করেন।

হালিমা এডেন সেখানে একটি সেলুন খুলে বসেন এবং শিশুদের চুল কাটার জন্য ১০ ডলার আর প্রাপ্ত বয়স্কদের চুল কাটার বিনিময়ে ২০ ডলার করে আয় করতে থাকেন। এই অর্থ দিয়ে তিনি বিদ্যালয়ের ফি এবং ঈদের কেনাকাটা করতেন।

তিনি বলেন, ‘একটি ১০ বছরের বালিকার জন্য এই আয় মন্দ ছিলো না।’

এডেন বলেন, তার মা তাকে সামনে এগিয়ে যেতে সবসময় উৎসাহ দিতেন। শরণার্থী কেন্দ্রে একজন শিশু হিসেবে এডেন সবসময় দেখতেন তার মা কোনো না কোনো কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। তার মা সেখানে বিভিন্ন ঘরোয়া জিনিসপত্র বিক্রয়ের পাশাপাশি একটি টমেটো দোকান চালাতেন।

তিনি আরো বলেন, ‘অনেক সংস্কৃতিতেই শিশুদেরকে তাদের পরিবারের কাজে সহায়তা করার জন্য উৎসাহিত করা হয়।’ তার মতে সোমালিয়ার সংস্কৃতিও ঠিক এমনই ছিলো।

মিনিসোটাতে থাকাকালীন যখন তার বয়স ১৬ বছর হয়েছিলো তখন এডেন সেন্ট ক্লাউড হাসপাতালে দুটি কাজ নিয়েছিলেন। তিনি সেখানে পরিষ্কারকের কাজ এবং রোগীদের সেবা শশ্রুষার কাজ করতেন। এডেন জানান, তিনি প্রথম ধাপে সকাল ৫ ঘটিকা হতে সকাল ৭ ঘটিকা পর্যন্ত কাজ করতেন। আর দ্বিতীয় ধাপে বিকাল ৩ ঘটিকা হতে রাত ১১:৩০ ঘটিকা অবধি কাজ করতেন।

ফ্যাশন ম্যাগাজিন টিন ভোগের মতে, এডেন প্রতিদিনই তার রুটিন কাজের ফাঁকে সময় করে বিভিন্ন কাজ করে থাকেন।

এডেন বিদ্যালয়ের দিনগুলো স্মরণ করে বলেন- ‘আমি সেইদিন গুলোর কথা মনে করি যখন দিন রাত কাজ করার কারণে আমাকে লাল চোখ নিয়ে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হতে হত।’

এই তরুণী মডেল এখন সোমালিয়াতে তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের জন্য অর্থের যোগান দেন এবং তার মাকে তিনি বাড়ি বাড়া দেয়ার জন্য সাহায্য করেন। বেচে যাওয়া ডলার গুলো তিনি গাড়ি ক্রয় করার জন্য জমিয়ে রাখেন।

একজন মডেল হওয়ার পরেও এডেন অন্যকে সাহায্য করা থামিয়ে দেন নি। তিনি ইউনিসেফের শুভেচ্ছা দূত হিসেবেও কাজ করছেন। ইউনিসেফের সাথে তিনি কেনিয়ার যে শরণার্থী কেন্দ্রে বড় হয়েছিলেন সেখানে ভ্রমণ করেছেন এবং শরণার্থীদের সাহায্য সহযোগিতা করেছেন।

সম্প্রতি এডেন ইউনিসেফ কর্তৃক প্রকাশিত একটি ফ্যাশন বই কে পরিচিত করে দেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সুপার মডেল গিগি হাদিদের সাথে যোগদান করেছেন।

বর্তমানে অর্থের সাথে এডেনের একটি ভিন্ন সম্পর্ক রয়েছে। তিনি সরকারকে আয়কর দিতে ভালোবাসেন। এডেন বলেন যখন তিনি ও তার পরিবার প্রথম যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন তখন তারা সরকারের অর্থ সহায়তার উপরে নির্ভর করেছিলেন এবং তিনি খুশি মনে আয়কর দেয়ার মাধ্যমে অন্যদের সহায়তা করতে চান।

বর্তমানে এডেন তার ভবিষ্যৎ অগ্রগতি নিয়ে সচেতন হয়েছেন। তিনি তার ভবিষ্যতের জন্য অর্থ জমানো শুরু করেছেন এবং পূর্বের তুলনায় অনেক বেশী মিতব্যয়ী হয়েছেন।

২০ বছর বয়সী এই মডেল তার অতীত জীবন সম্পর্কে জানাতে লজ্জাবোধ করেন না। এডেন জানান- তিনি ভবিষ্যতে একটি ব্যবসা খুলতে চান যেখানে তার ক্রেতার তার অতীত জীবন সম্পর্কে জানতে পারবেন।

হালিমা এডেন বলেন, ‘কিভাবে এর সবকিছু শুরু হয়েছিলো?’, ‘এটি শুরু হয়েছিল হিজাব পরিধানের মাধ্যমে। সুতরাং আমি যদি হিজাব পরিধান করা চালিয়ে যাই এটি কতইনা সুন্দর হবে।’ টাইম ডট কম।

captcha